বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজশাহীবাসীর বহুল প্রতিক্ষিত রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি) স্থাপন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টায় রাজশাহী মহানগরীর বাজেসিলিন্দা এলাকায় অধিগ্রহণকৃত নিজস্ব জমিতে প্রধান অতিথি রামেবি’র উপাচার্য প্রফেসর ডা. মোহাঃ জাওয়াদুল হক অতিথিবৃন্দকে নিয়ে ফলক উন্মোচন, বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে এই স্থাপনা প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০ টায় রামেবি’র কোষাধ্যক্ষ ডা. মোঃ জাকির হোসেন খোন্দকার এর সভাপতিতে উদ্বোধনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বেধনী সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সল আলম।
এসময় আরো বক্তব্য দেন, বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. এরশাদ আলী ঈশা, রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা ড. কেরামত আলী প্রমুখ। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, নগরীর সুধিজন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অধিভুক্ত বিভিন্ন মেডিকেল ও নার্সিং কলেজের শিক্ষকবৃন্দ, বৈসম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক, রামেবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. মোঃ আব্দুস সালামসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রামেবি’র উপাচার্য প্রফেসর ডা. মোঃ জাওয়াদুল হক বলেন, দেশের মানুষের চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান এবং সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের নিমিত্ত ২০১৬ দেশে ৪টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ২০১৭ সাল থেকে রামেবি’র একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। সে হিসেবে রামেবি’র বয়স প্রায় ৮ বছর। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্প প্রণয়ন, প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন ও অনুমোদন, ভূমি অধিগ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট বহু কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এই কাজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, জেলা প্রশাসন, গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশলসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেছেন। আজ উদ্বোধনের মাধ্যমে নিজস্ব জায়গায় রামেবি’র অবকাঠামো নির্মাণের যাত্রা শুরু হলো। খুব শীঘ্রই দৃশ্যমান হবে রামেবি।
উপাচার্য আরও বলেন, রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার আওতাধীন বড় বনগ্রাম মৌজা, বাজে সিলিন্দা ও বারইপাড়া মৌজার অংশ নিয়ে মোট ৬৭.৬৭৯২ একর জমির উপর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, রামেবি হবে পরিবেশ বান্ধব ও সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি দুটি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১২’শ শয্যাবিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল ভবন, যা বেসমেন্টসহ ১২ তলা। এই হাসপাতাল ভবনটির সর্বমোট আয়তন হবে প্রায় ১২ লক্ষ বর্গফুট। বিশ্বমানের সকল সুবিধাদি এখানে বর্তমান থাকবে। এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইসিইউ, অত্যাধুনিক ওটি রুম ও পোস্ট অপারেটিভ রুম সমূহ থাকবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সহকারে পর্যাপ্ত ওয়ার্ড ও কেবিনের ব্যবস্থা থাকবে। কেবিন এবং ওয়ার্ডের বেডসমূহে মেডিকেল গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা থাকবে। রোগীদের নিকট হতে স্যাম্পল কালেকশনের পর মনুষ্য পরিবহন ব্যতিরেকেই পাইপ লাইনের মধ্য দিয়ে নিউমেটিক প্রেসার এর মাধ্যমে সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হবে।
হাসপাতালে বৃহদায়তন ২২ টি লিফটের পাশাপাশি থাকবে ৪ টি এসকেলেটর। হাসপাতলে বিদ্যুৎ সংযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখবার লক্ষ্যে তিন স্তরের বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল ভবনের জন্য উন্নতমানের দুইটি আলাদা বৃহদাকার পাওয়ার জেনারেশন ইউনিটের ব্যবস্থা থাকবে। অগ্নিসংক্রান্ত দুর্ঘটনা এড়াবার লক্ষ্যে ভবনের অভ্যন্তরীণ ফাইয়ার ফাইটিং ব্যবস্থাের পাশাপাশি, অতিরিক্ত সর্তকতা হিসেবে একটি সেটেলাইট ফায়ার স্টেশন নির্মিত হবে। এছাড়াও সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা থাকবে এবং থাকবে আধুনিক নার্স কলিং সিস্টেম। হাসপাতালের সন্নিকটেই থাকবে বেসমেন্টসহ ১০ তলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক একাডেমিক ভবন।
এসময় উপাচার্য বলেন, প্রথম পর্যায়ের নির্মাণের শেষেই, যাতে করে এই ক্যাম্পাস হতে বিশ্ববিদ্যালয় যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করা যায় সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন, উপাচার্যের বাসভবন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তিনটি ডরমেটরী, একটি মর্গ, একটি স্কুল, একটি মসজিদ, তিনটি বিদ্যুতের সাব-স্টেশন, একটি স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশন, এছাড়াও নির্মিত হবে সীমানা প্রাচীর, সদৃশ্য তিনটি গেইট, বিশটি নিরাপত্তা চৌকি যাতায়াতের জন্য রাস্তা, পয়ো নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। সর্বোপরি এই হাসপাতালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল এর পরিবেশ। পরিবেশের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে এখানে থাকবে প্রায় ৯ একরের একটি জলাধার। এটি সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস ও এর আশেপাশের এলাকার প্রয়োজনীয় আদ্রতা বজায় রাখতে সহযোগিতা করবে। অন্যদিকে এটি বৃষ্টির পানি ও ক্যাম্পাসের ব্যবহৃত পানির আধার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। উল্লেখ্য যে, যথাযথ শোধনের পরেই ব্যবহৃত পানি জলাধারে সংরক্ষণ করা হবে। এই সবুজ ক্যাম্পাসের সবুজের সমারহ যথাসম্ভব যথাযথ রাখা হবে। সে লক্ষ্যে বেশ কিছু গাছকে না কেটে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক উপযুক্ত শ্রেণীর নতুন বৃক্ষ রোপন করবার পরিকল্পনা রয়েছে। এরফলে আগামী প্রজন্মের জন্য প্রকৃতির কোলে আধুনিকতার ছোয়ায় এখানে গড়ে উঠবে একটি বিশ্বমানের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো নির্মাণ কাজের পাশাপাশি চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়নে খুব দ্রুত চিকিৎসা বিজ্ঞান ও নার্সিং এর বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের স্নাতকোত্তর কোর্স সমূহ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরফলে বিশ্বমানের দক্ষ ও বিজ্ঞ চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মী তৈরি হবে। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৫৭ কোটি টাকা এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭৬ কোটি টাকা। এছাড়াও নির্মাণ কাজে ধরা হয়েছে ১০০৩ কোটি টাকা এবং যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের জন্য অনুসাঙ্গিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে ২০২৭ সালের ৩০ শে জুনের মধ্যে শেষ করবার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় পর্যায়ের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকবে আরও ৪টি একাডেমিক ভবন, ৩টি হল ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৪০ টি বাসভবন, ১টি লাইব্রেরি ভবন, ১টি টিএসসি ভবন, ১টি জিমনেসিয়াম, ১টি অডিটোরিয়াম, ১টি শহীদ মিনার, ১টি মন্দির, ১টি আন্তর্জাতিক মানের গেস্ট হাউজ ও হোটেল এবং ১টি বাণিজ্যিক ভবন।
Read more
https://www.dhakatimes24.com/2024/12/02/373491
https://www.bssnews.net/bangla/national/164268
https://www.facebook.com/share/v/1G5paezMcF/?mibextid=2Xzr3SNpE5dFVwDb